দেশের বিভিন্ন পৌরসভায় সরকারের উন্নয়নের আধুনিকতার ছোঁয়া পেলেও সে সৌভাগ্য জোটেনি ফরিদগঞ্জ পৌরবাসীর কপালে। সুপেয় পানির লাইনের কাজ দীর্ঘদিন যাবত চলমান থাকলেও স্বপ্নই রয়েগেছে গ্যাসের ব্যবস্থা, পৌরসভায় বসবাস হলেও কিছু কিছু স্থানে ইউনিয়নের লাইনের সাথে সংযোগ রয়েছে বিদ্যুতের।
পৌরসভার সকল প্রকার ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়েও ইউনিয়নের লাইন গুলোর লোডশেডিং-র ভেলকি বাজিতে অতিষ্ঠ হতে হয় ভুক্তভোগীদের। বর্তময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ নিয়ে প্রবেশ করতে হয় পৌর শহরে। ১৭ বছর পূর্বে স্থাপিত এই পৌরসভায় এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
শহরে প্রবেশের সবগুলো পথেই রাস্তার পাশে যত্রতত্র স্থানে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে,সরকারি কর্মকর্তা, স্কুল-কলেজে পড়ুয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থীরাসহ পৌরবাসী। ময়লার দুর্গন্ধে নাক চেপে শহরে ঢুকতে পথচারীদের। এই দুর্গন্ধ দিয়েই যেন স্বাগত জানানো হয় অফিসপাড়ায় ও পৌর শহরে আগতদের।
পৌর শহরে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি পুকুর পরিপূর্ণ হয়েছে ময়লা আবর্জনায়। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন পার্শবর্তি রামগঞ্জ উপজেলা ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোকজনসহ পৌর সদরে অফিসপাড়ায় মানুষ চলাচল করে। এ ছাড়াও সবগুলো ময়লার ভাগাড়ের পাশেই রয়েছে অসংখ্য মানুষের বসবাস। ময়লা-আবর্জনা অন্যত্র ফেলার জন্য বার বার পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না তারা।
পৌরসভা সূত্র জানা যায়, ২০০৫ সালে ফরিদগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯ দশমিক ৭৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার লোকের বসবাস। ১৭ বছরের এই পৌরসভায় ২ বার ক্ষমতাশীন দলের মেয়র নির্বাচিত হলেও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা তো দূরের কথা, নির্দিষ্ট ভাগাড় পর্যন্ত নির্মাণ হয়নি আজও। সব আবর্জনা ফেলা হচ্ছে শহরে প্রবেশের বিভিন্ন সড়কের পাশে।
বিগত ৫/৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে পৌরশহরের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে পৌর সদরে প্রবেশমুখে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাশে। আর দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের ময়লা ফেলা হচ্ছে পৌর এলাকার আরেক প্রবেশমুখ চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থিত নবনির্মিত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স’র সামনে, এত নষ্ট ক্ষুণ্য হচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে নির্মিত এ ভবনটির সুন্দর্য। পশ্চিম-উত্তর অংশের ময়লা ফেলা হচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের মরদেহ দাহ করার স্থান মহাস্মসানের পাশে ডাকাতিয়া নদীতে, এতে দুঃষিত হচ্ছে নদীর পানি বিলুপ্তি হতে বসেছে নদীর মৎস্য সম্পাদ আশে-পাশের মানুষের দূর্ভোগ আছেই। উত্তর-পূর্ব অংশের ময়লা ফেলা হচ্ছে কেরোয়া ব্রীজের পাশ দিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে।
এছাড়াও উপজেলার সহকারি কমিশনার ভূমি কার্যালয় ও থানার সামনেও সড়কের পাশেই পরিনত হয়েছে ময়লার বাগারে। সবমিলি পৌর এলাকায় আগাত সবগুলো সড়কের পাশেই ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। এতে দুঃষিত হচ্ছে পরিবেশ, চড়াচ্ছে রোগ জীবানু, যাতায়াতের পথে দুর্গন্ধে হুমকিতে রয়েছে কমলমতি শিক্ষার্থীদেরসহ পৌর সদরে আগত মানুষের রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুকি। স্থানীয় ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ময়লার গন্ধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করাই আমাদের দায় হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন গাজী বলেন, এই ময়লার গন্ধে আমার বাড়িতে কোনো ভাড়াটিয়া পাই না। দুর্গন্ধে নিজেরাও থাকতে পারি না। নিজের বাড়ি ফেলে যেতে পারি না, তাই কষ্ট হলেও বসবাস করছি।
শিক্ষার্থী সোনালী আক্তার বলেন, এখান দিয়ে প্রতিদিন আমি কলেজ কলেজে যাই। আমার দাবি পৌরসভা খুব দ্রুত এই ময়লা অন্যত্র সরিয়ে নিবে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফ আহাম্মেদ চৌধুরী বলেন, খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা আইন পরিপন্থি কাজ। ফরিদগঞ্জ পৌরসভার যে পরিমাণ ময়লা খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে এতে প্রচুর পরিমাণ মিথেন গ্যাস তৈরি হচ্ছে। যা মানব দেহের জন্য খুবই বিপজ্জনক। যে কোনো সময়ে আশে-পাশে বসবাসকারীদের বড় ধরনের রোগ বালাই হতে পারে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আকতার রুমা বলেন, আমাদের অফিসে আগত মৎস্য খামারিদেরসহ অফিস স্টাফদের অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ ময়লা আবর্জনার দূগর্ন্ধে। এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে বার বার পৌরকর্তৃকেপক্ষকে লিখিত নোটিশ দিলেও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে ময়লা ফেলার জন্য নির্ধারিত জায়গা দেয়ার জন্য প্রস্তাব রেখেছি। আমরা নতুন জায়গা পেলে সেখানে ময়লা রি-সাইকেল করতে পারবো। এতে আমাদের পৌরসভার পরিবেশ সুন্দর হবে।