সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৮:৪১ পূর্বাহ্ন

শ্মশানে চিতার আগুন নেভে না, বাড়ে লাশের সারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক / ২৮২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২১

করোনাভাইরাস মহামারির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ভারত। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রবল ধাক্কায় শুধু দিল্লিতেই প্রতিদিন কয়েক শ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। শ্মশানগুলোতে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের সারি। দিন-রাত কাজ করেও সব শবের দাহ শেষ করতে পারছেন না শ্মশানকর্মীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে শ্মশানের পরিসর বাড়ানোর সঙ্গে পার্কেও গড়ে তোলা হচ্ছে চিতার অবকাঠামো।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু দিল্লিতেই সোমবার সরকারি হিসাবে ৩৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর কোভিড রোগীদের প্রাণরক্ষায় অপরিহার্য অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে। সংকট দেখা দিয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের।

গত কয়েক দিনেই ভারতে ১০ লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভারত সরকার বিগত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ শনাক্তের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে আগের দিনের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এ দিন ৩ লাখ ২৩ হাজার ১৪৪ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানানো হয়। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯১, যা এক দিনে একক কোনো দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী শনাক্তের রেকর্ড। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১ কোটি ৭০ লাখের মতো করোনা রোগী শনাক্ত এবং ১ লাখ ৯২ হাজার জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে সংক্রমণ ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা এই হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে দিল্লিতে অন্তত ১ হাজার ১৫০ জনের করোনায় মৃত্যুর তথ্য কর্মকর্তাদের হিসাবের বাইরে রয়ে গেছে। অন্যান্য অনুসন্ধানেও দেশজুড়ে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর তথ্য এভাবে সরকারি হিসাবের বাইরে থাকার বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে।

বিবিসি বলছে, শ্মশানকর্মীরা প্রায় সারা রাত কাজ করছেন। মৃত ব্যক্তিদের স্বজনেরাও তাঁদের সঙ্গে হাত লাগাচ্ছেন। চিতা সাজানো ও অন্যান্য ধর্মীয় রীতি পালনে সহযোগিতা করছেন তাঁরা।

দিল্লিতে শবদাহে চিতার অবকাঠামো তৈরি করার জন্য পার্কিং লট, পার্ক ও খোলা মাঠ চাওয়া হচ্ছে। স্বজনের শব দাহ করার জন্য পরিবারের সদস্যদের প্রায়ই কয়েক ঘণ্টা করে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দিল্লির সরাই কালে খান শ্মশানে নতুন অন্তত ২৭টি চিতার অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। আরও ৮০টি তৈরি করা হয়েছে পার্কে। পৌর কর্তৃপক্ষ যমুনা নদীর তীরে দাহ করার আরও জায়গা খুঁজছে।

ওই শ্মশানের একজন কর্মী দ্য হিন্দু পত্রিকাকে বলেছেন, তাঁরা খুব সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করছেন।

পূর্ব দিল্লির ঘাজিপুর শ্মশানে পার্কিংয়ের জায়গায় ২০টি চিতার অবকাঠামো নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। একজন কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, অবকাঠামোর তুলনায় মরদেহের সংখ্যা অনেক বেশি। আরও চিতার অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। একটি শব দাহ করতে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। সে কারণে মরদেহ নিয়ে আসা স্বজনদের জন্য তিন থেকে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অন্যান্য শ্মশানের অবস্থাও গুরুতর।

করোনা রোগীর চাপে নয়াদিল্লির এই ব্যাংকোয়েট হলকে হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে

দুই কোটি মানুষের নগরী দিল্লিতে হাসপাতালগুলো কোনো শয্যা ফাঁকা নেই। অক্সিজেনও হয়ে উঠেছে দুষ্প্রাপ্য। নগরীর অন্তত দুটি হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে রোগীদের মৃত্যু হয়েছে। সংকট তৈরি হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স সেবায়ও। বহু চেষ্টায় কোনো হাসপাতালে একটি বেড পাওয়া গেলেও রোগীকে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় থেকে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও আইসিইউ শয্যার জন্য সহায়তা চেয়ে করা পোস্টে ভরে উঠছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো।

এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশই ভারতের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর নিয়ে এগিয়ে এসেছে তারা।

যুক্তরাজ্য ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ডিভাইস পাঠানো শুরু করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশগুলোও সহায়তা পাঠানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ফ্রান্স অক্সিজেন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। আমেরিকার ‘পূর্ণ সহযোগিতার’ আশ্বাস দিয়েছেন জো বাইডেন। টিকা তৈরির কাঁচামাল বিদেশে পাঠানোর ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাও তুলে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে। যুক্তরাষ্ট্র চিকিৎসা ও সুরক্ষা সরঞ্জামও পাঠাবে।

দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশ ভুটান ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে তরল অক্সিজেন পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। কয়েক বছর ধরে সম্পর্কে শীতলতা চললেও পাকিস্তান এই দুঃসময়ে ভারতকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠাতে চাইছে তারা। পাকিস্তানের ঈদি ফাউন্ডেশন ভারতে ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ