মুসলমানরা পরকালের উপকারের কথা ভেবে তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে বেহেশতে যাওয়ার জন্যই নামাজ পড়ে। কিন্তু এ নামাজ আদায় থেকে দেখা যায় ইহকালেও নানাবিধ উপকার। যেমন—পরিচ্ছন্নতা, সামাজিকতা, ব্যায়াম ইত্যাদি।
নিম্নে এ বিষয়ে বর্ণনা করা হলো—
শুধু যে নামাজের জন্য অজু তথা হাত-পা ইত্যাদি ধুতে হয় তা নয়, গড়গড়া করে কুলিও করতে হয় এবং নাকের ভেতরে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়। তা ছাড়া শরীর, নামাজের স্থান ও পোশাক পাক-পবিত্র হতে হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য মুসলমানদের সারা দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়।
আর নামাজের দ্বারা মুমিন ব্যক্তির মন সর্বাধিক প্রশান্ত হয় এবং সে মানসিকভাবে শান্তিতে থাকে।
অর্থাৎ যথাযথভাবে নামাজ আদায়কারী বিপদে অবিচল থাকতে পারে।
নামাজ শরীরের জোড়াগুলোকে (Joint) শক্ত হয়ে অচল হয়ে যাওয়া রোগ (Paralysis)থেকে রক্ষা করে। নামাজের মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে রুকুতে ও সিজদাতে যাওয়া-আসার এবং রুকু ও সিজদায় কিছুক্ষণ অবস্থানের কারণে কোমর ও পিঠের সংশ্লিষ্ট হাড়ের জোড়াগুলো শক্ত হতে পারে না। ফলে সেগুলোরও স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা বজায় থাকে। এখন নামাজের বিভিন্ন অবস্থায় যেসব ব্যায়াম সাধিত হয় এবং এর দ্বারা যেসব উপকার পাওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা হলো—
(১) তাকবিরে তাহরিমা : ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নামাজে যখন হাত দুটো কান পর্যন্ত ওঠানো হয় এবং এরপর হাত বাঁধার জন্য নামানো হয় তখন বাহুদ্বয়ের ব্যায়াম হয়ে যায়। এ ছাড়া কনুইয়ের সামনে যে অঙ্গগুলো এবং কাঁধের জোড়ার যে অঙ্গগুলো এ নিয়ত বাঁধার সময় ব্যবহৃত হয় সেগুলোরও এর সঙ্গে ব্যায়াম হয়ে যায়।
(২) দাঁড়ানো (কিয়াম) : নামাজে দাঁড়ানোর সময় মেরুদণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে দাঁড়াতে হয়। এটা মেরুদণ্ডকে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে সামনের দিকে বাঁকা হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
(৩) হাত বাঁধা : নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় হাত বাঁধার সময় কনুইয়ের আগে-পিছে থাকা পেশি এবং বগলের পেছনের পেশির ব্যায়াম হয়ে যায়। নামাজে বাঁ হাত নিচে পেটের ওপর রাখা হয় এবং এর ওপর ডান হাত দিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে রাখা হয়। এর ফলে হাতের তালু, আঙুল ও কবজির ব্যায়াম হয়।
(৪) রুকু : দুই হাঁটুর ওপর হাত রেখে কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত সামনে ঝোঁকানো অবস্থাকে রুকু বলা হয়। এখানে মাথাকে এমনভাবে ঝোঁকাতে হয়, যাতে কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত শরীর মেঝের সমান্তরাল থাকে। এ নড়াচড়ায় শরীরের সংশ্লিষ্ট পেশিগুলোর ব্যায়াম হয়ে যায়।
রুকু দ্বারা মূত্রাশয়ের উপকার হয় এবং চোখের প্রান্তে ও মস্তিষ্কে রক্ত পরিসঞ্চালন বৃদ্ধির ফলে চোখের ও মস্তিষ্কের উপকার হয়।
(৫) সিজদা : সিজদার সময় মাথা হার্ট থেকে নিচু অবস্থায় থাকে। এতে মাথায় রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। সিজদা যত দীর্ঘ সময় হয় তত বেশি রক্ত মস্তিষ্কে ও মুখমণ্ডলে প্রবাহিত হয়। এর ফলে নামাজি ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং মুখের চেহারার ওপর সতেজতা থাকে। সিজদার ফলে হাত, পা, কোমর ও পিঠের ব্যায়াম হয়। সিজদার দ্বারা পেট, পেটের নিচের অংশের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া হয় ও রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম ইত্যাদি রোগেরও উপকার হয়।
(৬) বৈঠক : নামাজের বৈঠক অবস্থায় হাঁটু ও নিতম্বের ওপর চাপ পড়ে; বিশেষ করে চাপ পড়ে পায়ের গোড়ালির ওপর। এভাবে এ অঙ্গগুলোর ব্যায়াম হয়ে যায়।
(৭) সালাম ফেরানো : নামাজ শেষে বসা অবস্থায় ডান ও বাঁ দিকে সালাম ফেরানো হয়। এতে শরীরের শুধু মাথা ও ঘাড় ডান দিকে ও বাঁ দিকে ফেরানো হয়। এটা ঘাড়ের উত্তম ব্যায়াম, যা নামাজের মাধ্যমে সাধিত হয়।
মূল কথা হলো, নামাজের দ্বারা আত্মিক উন্নতি হয়। নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলমান নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে। এই আত্মসমর্পণের ফলে আত্মিক দিক দিয়ে সে শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর ধ্যানে তার মন প্রশান্ত হয়। এভাবে পরকালের পাশাপাশি ইহকালেও নামাজ বহুমুখী কল্যাণ বয়ে আনে।