১. ইবাদতের মাত্রা বৃদ্ধি : পবিত্র রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইবাদতের মাত্রা খুব বেশি বাড়িয়ে দিতেন। শেষ দশক এলে এর মাত্রা আরো বেড়ে যেত। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা এত বেশি বাড়িয়ে দিতেন, যেমনটি অন্য সময় করতেন না। (আস সুনানুল কুবরা, হাদিস : ৮৩৫১; মুসলিম, হাদিস : ১১৭৫)
২. পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দেওয়া : রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) সারা রাত জেগে থাকতেন। শেষরাতে পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানের শেষ দশক এলে রাসুল (সা.) কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং রাত জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ২০২৪)
তাহাজ্জুদের জন্য অন্যকে জাগানোর ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে তেমন জোর দেওয়া না হলেও পবিত্র মাহে রমজানের শেষ দশক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় তখন তিনি পরিবার-পরিজনকে ইবাদতের জন্য শেষ রাতে জাগিয়ে তুলতেন।
৪. লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা : রমজানের শেষ দশকে শান্তির বার্তা নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। যেই রাতকে মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদর আখ্যা দিয়েছেন। মোবারক এই রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে (লাইলাতুল কদর)। আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কী? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতারা এবং রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাতে শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ১-৫)
বিভিন্ন হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, উল্লিখিত আয়াতে মহিমান্বিত যে রাতের কথা বলা হয়েছে, তা এই শেষ দশকেই লুকিয়ে আছে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)
৫. বেশি বেশি দোয়া করা : নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করতেন। উম্মতকে শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করার পরামর্শ দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমি লাইলাতুল কদর জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, তুমি বোলো, (উচ্চারণ) ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি’ (অর্থ) ‘হে আল্লাহ, আপনি সম্মানিত ক্ষমাকারী, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)
৬. তাওবা করা : মহান আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ করিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস রমজান। কোনো ব্যক্তি যদি রমজানে তার গুনাহ ক্ষমা করাতে ব্যর্থ হয়, তবে তার প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুঁশিয়ারি আছে। তিনি বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলাধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)
৭. সদকাতুল ফিতর আদায় করা : শেষ দশকের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সদকাতুল ফিতর আদায় বা আদায়ের প্রস্তুতি। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ঈদের নামাজের আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন। (বুখারি, হাদিস : ১৫০৩)
আমাদের উচিত শেষ দশকের পরিপূর্ণ ফজিলত অর্জনের জন্য নবীজি (সা.)-এর শেখানো আমলগুলোতে জোর দেওয়া, মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।