শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন

করোনার টিকাকে বিশ্বব্যাপী সাধারণ পণ্য ঘোষণার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

নিউজ ডেস্ক / ১৬২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২২ জুন, ২০২১

সবার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে করোনাভাইরাসের টিকাকে বিশ্বব্যাপী সাধারণ পণ্য ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি আয়োজিত কাতার ইকোনোমিক ফোরামে রাখা বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে করোনা সংকট কাটিয়ে উঠে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে বিশেষ পরিকল্পনা করতেও বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিশ্বের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করতেই আয়োজন করা হয়েছে কাতার ইকোনোমিক ফোরামের এই আলোচনা। ‘আগামীর জন্য নতুন দিগন্ত’ শীর্ষক স্লোগান নিয়ে গতকাল সোমবার শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী সম্মেলনটিতে শতাধিক বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ এবং ব্যবসায়ীবৃন্দ ভিডিও বার্তা দিচ্ছেন।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি এই আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর বক্তব্যে করোনা মহামারি প্রতিরোধে বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারির পরে টেকসই এবং ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমাদের অংশীদারিত্বমূলক সমৃদ্ধির জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং সামগ্রিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রয়োজন, আমাদের এখন সামগ্রিক বৈশ্বিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন।

ভিডিও বার্তায় কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে এবং সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে, আন্তর্জাতিক সমৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব নিরসনে অবিলম্বে সম্মিলিত ও সামগ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণের জন্য উচ্চাভিলাষী জলবায়ু পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ও রপ্তানি আয়ের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে লক্ষ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সহায়তার পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশগুলোকে অবশ্যই ডিজিটাল বিভাজন বন্ধ করার জন্য বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের সার্থকতা অর্জন করতে হবে এবং মহামারিজনিত কারণে যে কোনও সম্ভাব্য চ্যুতি প্রতিরোধে গ্রাজুয়েশন প্রাপ্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য নতুন আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

শেখ হাসিনা অভিমত দেন যে এই অঞ্চলে আয়োজক দেশ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরা অভিবাসী শ্রমিকদের পুনরায় একত্রীকরণ পরিকল্পনায় অবদান রাখতে হবে।

বিশ্ব সংহতির জন্য কোভিড-১৯ মহামারিকে লিটমাস টেস্ট আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, যেহেতু এতে ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এবং অর্থনীতিকে ক্ষতবিক্ষত করেছে তাই ‘এজেন্ডা ২০৩০’, ‘প্যারিস চুক্তি’ এবং ‘আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডা’ সংকট উত্তোরণের ব্লু প্রিন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে।

কাতার ইকোনমিক ফোরাম আমাদের সুযোগগুলোকে শনাক্ত করার জন্য এবং এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধারণা এবং সমাধানগুলো ভাগ করে নিতে এবং ভবিষ্যতের সংকটগুলো দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করেছে।

শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে আবারও বলেন যে কোভিড-১৯ টি ভ্যাকসিনকে বিশ্বব্যাপী পাবলিক পণ্য হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং উন্নয়নশীল দেশ ও এলডিসি যাদের সক্ষমতা রয়েছে তাদের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া উচিত।

মহামারিবিরোধী লড়াইয়ের বাংলাদেশের ব্যবস্থাগুলো সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন যে সরকার জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। কেননা তাঁর সরকার এ পর্যন্ত ১৫ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারি থাকা সত্ত্বেও ২০২০-২০১২ সালে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ। তাঁর সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রুপকল্প দেশটিকে কোভিড-১৯ পরবর্তী নতুন বাণিজ্য এবং কাজের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সহযোগিতা করেছে, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী কাতার এবং অন্যান্য মধ্য-প্রাচ্যের দেশগুলোর সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে, আইসিটি, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি, হালকা প্রকৌশল, ওষুধ শিল্প এবং কৃষিজাত পণ্য খাতে চমৎকার বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান। কেননা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার বিস্তৃত পরিসরে প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বিশ্বজুড়ে পপুলিজম, বিশ্বায়ন-বিরোধী মনোভাব এবং অর্থনৈতিক সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে বহুত্ববাদকে শক্তিশালী করার জন্য একসঙ্গে দাঁড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে দেশগুলোয় এবং বিশ্বের সব জায়গায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা দরকার কারণ এগুলো অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের পূর্বশর্ত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ