দেশজোড়া প্রবল সমালোচনার মুখে ১৮ বছরের বেশি বয়সের সবাইকে বিনা মূল্যে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার বিকেলে দেশবাসীর প্রতি ভাষণে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ২১ জুন থেকে এই লক্ষ্যে সব রাজ্য সরকারকে বিনা মূল্যে টিকা সরবরাহ করা হবে। এর ফলে মোট টিকার ৭৫ শতাংশই কেন্দ্র কিনবে এবং বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে তা বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হবে।
মোদি বলেন, বাকি ২৫ শতাংশ টিকা থাকবে তাঁদের জন্য, যাঁরা অর্থ খরচে প্রস্তুত। বেসরকারি হাসপাতালগুলো সেই টিকা দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে দামও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। টিকার দামের ওপর বেসরকারি হাসপাতাল দেড় শ রুপি সার্ভিস চার্জ হিসেবে নিতে পারবে।
ভারতের টিকা নীতি বেশ কিছুদিন ধরেই সর্বস্তরীয় সমালোচনার মুখে পড়েছিল। সর্বোচ্চ আদালতও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই বিষয়ে মামলা করেছেন। কেন ৪৫ বছরের বেশি বয়স্ক নাগরিকদের টিকা দেওয়া দায় নিজের হাতে রেখে কেন্দ্র বাকি দায়িত্ব রাজ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। এই সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রী ফের টিকাকরণের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন। তবে রাজ্যের হাতে দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত কোন অবস্থায় নিতে হয়েছিল, তা তিনি ব্যাখ্যা করেন। বলেন, শুরু থেকেই বলাবলি হচ্ছিল কেন সবকিছু কেন্দ্র নিজে করছে? স্বাস্থ্য রাজ্য তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও কেন রাজ্যগুলোকে দায়িত্ব ছাড়া হচ্ছে না? বিকেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে না? গণমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রচার শুরু হয়। সরকার তাই ১ মে থেকে ২৫ শতাংশ টিকাকরণের দায়িত্ব রাজ্যের হাতে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু কাজটা যে কত কঠিন, রাজ্য সরকারেরা তা বুঝতে পেরেছে। তাই সরকার সেই দায়িত্ব আবার নিজের হাতে নিতে চলেছে। ২১ জুন থেকে নতুন এই ব্যবস্থায় কবে কোন রাজ্য কত টিকা পাবে, তা আগাম জানিয়ে দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে আরও জানান, দেশের দরিদ্রদের জন্য চিহ্নিত ‘প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র কল্যাণ অন্ন যোজনা প্রকল্প’ আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত বাড়ানো হবে। এই প্রকল্পে ৮০ কোটি দরিদ্র মানুষকে বিনা মূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হয়।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে তো বটেই, উন্নয়নশীল দেশসহ বহু মধ্যমানের দেশেও টিকাকরণের দায়িত্ব সরকার নিয়েছে। বিনা অর্থে তা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশেও টিকাকরণ ‘ফ্রি’। এই অবস্থায় ভারতে বিভিন্ন টিকার বিভিন্ন দাম নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
দেখা যায়, কেন্দ্র যে দামে উৎপাদকদের কাছ থেকে টিকা কিনছে, রাজ্যকে তা কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। বেসরকারি ক্ষেত্রেও দামে কোনো সমতা নেই। এই কারণে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, কেন ‘এক দেশ এক নীতি’ অনুযায়ী সর্বত্র টিকার এক দাম হবে না। কেন কেন্দ্র সব দায় নিজে নেবে না। সুপ্রিম কোর্ট সামগ্রিক টিকা নীতি নিয়ে কেন্দ্রকে জবাবদিহি করারও নির্দেশ দেন। এ কথাও বলেন, কোন সংস্থার কাছ থেকে কবে কত টিকা কোন দামে নেওয়ার বরাত দেওয়া হয়েছে, তার হিসাব জমা দিতে হবে। বাজেটে টিকাকরণের জন্য ৩৫ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দের হিসাবও দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একদিকে দেশজোড়া ক্ষোভ, মৃত্যু, হাহাকার; অন্যদিকে টিকা নীতি নিয়ে নাজেহাল কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নীতিতে বদল আনার সিদ্ধান্ত নেয়। আর, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যখন দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ কমের দিকে। সোমবার সারা দেশে সংক্রমণের সংখ্যা এক লাখের সামান্য বেশি।
টিকা নীতিতে বদল আনার আরও একটা সম্ভাব্য কারণ আগামী বছরের গোড়ায় উত্তর প্রদেশসহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। কোভিডের কারণে সর্বত্রই সরকারবিরোধী হাওয়া। এই পরিস্থিতিতে টিকাকরণের দায়িত্ব হাতে নিয়ে ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করা ছাড়া শাসক দলের অন্য উপায় ছিল না।