প্রযুক্তির দুনিয়ায় অ্যালগরিদমের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে অনেককিছু। আমরা আমাদের চারপাশে এমন অনেক জিনিস এখন দেখতে পারি যার আসলে কোনো বাস্তবতা নেই। নেই অস্তিত্ব।
অ্যালগরিদম শব্দটির অর্থ নির্দেশনা। লক্ষ-কোটি লাইনের নির্দেশনায় পরিচালিত হচ্ছে আমাদের জীবন। আপনাকে, আমাকে তারা পড়ছে, জানছে। তাদের কাছে আমরা নিজেদের উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। আমাদের সকল দুর্বল দিক, পছন্দের দিক তাদের জানা। অর্থাৎ তারা চাইলেই এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে একটি নির্দিষ্ট দিকে পরিচালনা করতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ার কথাই তুলে ধরা যাক। এটি আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। আজকাল প্রায় সব বয়সের মানুষকেই ফেসবুকে দেখা যায়। এছাড়া ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম তো আছেই। এ দেশে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে, তার সাথে ব্যবহারকারীও। বাড়ছে সেই সাথে বিশৃঙ্খলা, একে অপরের প্রতি তৈরি হচ্ছে বিরূপ মনোভাব; মানুষ বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে, অযাচিত কর্মকাণ্ড তৈরি হচ্ছে, ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে, ঝরে যাচ্ছে অনেকের প্রাণও।
সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক রয়েছে অনেক, এবং এই দিকগুলোকে পরিচালিত করা হচ্ছে। এই দিকগুলো যারা তৈরি করেছে বা পরিচালনা করছে তারা কিন্তু নেতিবাচক হিসেবে তৈরি করেননি। কিন্তু এর প্রভাব যেন সকল বাঁধ ভেঙে দিচ্ছে। অজান্তেই আমরা পা বাড়াচ্ছি অন্ধকার দিকে। অন্ধকার থেকে সরিয়ে আনতেও তৈরি করা হচ্ছে আরও অনেক অ্যালগরিদম। অর্থাৎ এই ভার্চুয়াল জগত নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও আর নেই আমাদের। অ্যালগরিদমের সাহায্যে কীভাবে পুরো দুনিয়া বদলে যাচ্ছে তারই গল্প শোনানো হবে আজ!
অ্যালগরিদম – সংজ্ঞা ও ইতিহাস
আসলে সব সময়ই আমরা অ্যালগরিদম আমরা ব্যবহার করে থাকি। কোনো কাজ সমাধান করার যে ধাপ বা নির্দেশনা সেগুলোই হচ্ছে অ্যালগরিদম। নিচের অ্যালগরিদমটি দেখলেই মোটামুটি একটি ধারণা আসবে। আমরা মনে করি আধুনিক পৃথিবীতেই অ্যালগরিদম ব্যবহার শুরু হয়েছে।
কিন্তু অ্যালগরিদমের ব্যবহার চলে আসছে সহাস্রব্দ ধরে। গণিতবিদ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খারেজমি অ্যালগরিদম শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন নবম শতাব্দীতে। তিনি হিন্দি-আরবীয় সংখ্যার উপর একটি বই লিখেছিলেন, যা পরবর্তীতে ল্যাটিন ভাষায় রুপান্তর করা হয়। এরপর ল্যাটিন শব্দ algoritmi থেকে আসে Algorithm।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুযায়ী প্রথম অ্যালগরিদমের ব্যবহার করেন ব্যবিলনীয়রা। তারা অ্যালগরিদমের সাহায্যে স্কয়ার রুটের মান ও খুব সাধারম হিসেব করতো। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইউক্লিড তার ‘Euclidean Algorithm’ উদ্ভাবন করেন। পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে ইসলামি বিশ্ব আরও জটিল ক্রিপ্ট্যালাইসিস, এনক্রিপশন এবং সাইফারের (সংকেত লেখনী) অ্যালগরিদম নিয়ে কাজ করে। বর্তমানের আধুনিক অ্যালগরিদমের উৎপত্তি হয় শিল্প বিপ্লবের মাঝ থেকে শেষের দিকে। তখন জর্জ বুলি বাইনারি বীজগণিত আবিষ্কার করেন যা আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তি।
এরপর অ্যাডা লাভলেস ১৮৪০ সালে প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেন যার মাধ্যমে অ্যালগরিদম প্রবেশ করে আধুনিক জগতে। তবে প্রথম যে মানুষটি অ্যালগরিদমকে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যান তিনি অ্যালান টুরিং। এরপর অলনজো চার্চের ল্যামডা ক্যালকুলাস সংযোজন আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের পথ খুলে দেয়।