মানুষ আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। সমগ্র মানুষকে সামাজিকভাবে একতাবদ্ধ করার জন্যই আল্লাহপাক যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসুল পাঠিয়েছেন।
মানব জাতি হিসেবে কারো মাঝে কোন ভেদাভেদ নেই। সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টি এবং একই সত্তা থেকে সবার সৃষ্টি।
যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রভু-প্রতিপালকের তাকওয়া অবলম্বন কর, যিনি একই সত্তা থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন আর তাদের উভয় থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন’ (সুরা আন নেসা, আয়াত: ১)।
এখানে কোন ধর্ম বা জাতির কথা বলা হয়নি বরং বলা হয়েছে ‘হে মানুষ’ অর্থাৎ সব মানুষের কথা বলা হয়েছে।
আবার বলা হয়েছে, তিনি একই প্রাণ থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি তা থেকেই এর জোড়া সৃষ্টি করেছেন’ (সুরা আয যুমার, আয়াত: ৬)।
তাই একজন মানুষ সে যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন মানুষ হিসেবে সবাই একই সম্প্রদায়ভূক্ত। তাই কাউকে অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই।
যেভাবে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, ‘আর মানবজাতি একই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে তারা মতভেদ করল’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ১৯)।
আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা করলে সবাইকে একই ধর্মের অনুসারী বানাতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি নিজেই যেহেতু মানুষকে বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত করেছেন তাই আমাদেরকেও ভিন্ন ধর্মের অনুসারীর প্রতি মন্দ আচরণ করা মোটেও ঠিক নয়।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: ‘আর তোমার প্রভু-প্রতিপালক যদি চাইতেন অবশ্যই তিনি সব মানুষকে এক উম্মত বানিয়ে দিতেন। কিন্তু তারা সব সময় মতভেদ করতেই থাকবে’ (সুরা হূদ, আয়াত: ১১৮)।
একইভাবে পবিত্র কোরআনের বিভিন্নস্থানে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: ‘আর আল্লাহ চাইলে তিনি তাদেরকে এক উম্মত বানিয়ে দিতেন, কিন্তু তিনি যাকে চান নিজ কৃপার অন্তর্ভূক্ত করেন। আর যালেমদের জন্য কোন বন্ধুও নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই’ (সুরা আশ শুরা, আয়াত: ৮)।
‘আর আল্লাহ যদি চাইতেন তিনি অবশ্যই তোমাদের সবাইকে একই উম্মতে পরিণত করে দিতেন। কিন্তু যে পথভ্রষ্ট হতে চায় তিনি তাকে পথভ্রষ্ট হতে দেন এবং যে সঠিক পথ পেতে চায় তিনি তাকে সঠিক পথ দেখান। আর তোমরা যা-ই করতে সে সম্পর্কে তোমাদের অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’ (সুরা আন নাহল, আয়াত: ৯৩)।
‘আর আল্লাহ যদি চাইতেন তোমাদের সবাইকে তিনি একই উম্মত করে দিতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন তা দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করতে চান। অতএব তোমরা সৎকাজে পরস্পর প্রতিযোগিতা কর’ (সুরা আল মায়েদা, আয়াত: ৪৮)।
‘নিশ্চয় তোমাদের এই উম্মত একই উম্মত এবং আমিই তোমাদের প্রভু-প্রতিপালক। অতএব তোমরা আমার ইবাদত কর’ (সুরা আল আম্বিয়া, আয়াত: ৯২)।
‘আর জেনে রাখ, তোমাদের এ সম্প্রদায় একটিই সম্প্রদায়। আর আমি তোমাদের প্রভু-প্রতিপালক। অতএব তোমরা কেবল আমাকেই ভয় কর’ (সুরা আল মোমেনুন, আয়াত: ৫২)।
পবিত্র কোরআনে উপরোক্ত বিষয়টি বার বার কেন উল্লেখ হয়েছে? নিশ্চয় এর কোন বিশেষ কারণ রয়েছে। মহান আল্লাহ হচ্ছেন সকল জ্ঞানের আধার।
তিনি জানতেন যে, এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষ একে অপরের ধর্ম নিয়ে মতবিরোধ করবে, সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, এক ধর্মের অনুসারী অন্য ধর্মের লোকদের তুচ্ছ জ্ঞান করবে।
তাই আল্লাহ পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন যে, তিনি চাইলে এক উম্মতভুক্তই করতেন সকলকে কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি আমাদেরকে যাচাই করার জন্য ধর্মের বিষয়টি স্বাধীন করে দিয়েছেন।
পবিত্র কোরআন আমাদের এই শিক্ষাই দেয়, আমরা যেন সকল মানুষের প্রতি দয়াশীল হই। যেহেতু আমাদের সবার সৃষ্টির মূল একটাই। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাদেরকে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠিতে বিভক্ত করেছেন। আজকে সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় শুধু অশান্তি আর অশান্তি। এক ধর্মের অনসারী ভিন্ন ধর্মের অনুসারীকে যেন সহ্যই করতে পারে না। মানবতা বলতে মনে হয় কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবাই নিজ নিজ স্বার্থ অর্জনের জন্য ব্যস্ত। একে অপরের প্রতি নেই কোন প্রেম-ভালবাসা। আমরা কি পারি না সবাই মিলে ঐকবদ্ধ হয়ে এক সাথে দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে? দেশকে মায়ের মত ভালোবাসতে?
আল্লাহতায়ালা মানুষকে সৃষ্টির পর দু’টি পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। একটি হল ভাল আর অপরটি হল মন্দ। যে ভাল কাজ করবে সে তার প্রতিদান পাবে আর যে মন্দ কাজ করবে সেও তার প্রতিদান পাবে। আল্লাহতায়ালা ধর্মের ব্যাপারে কারো ওপর কোন ধরণের বল প্রয়োগের অনুমতি দেন নি। এ ব্যাপারে সবার স্বাধীনতা রয়েছে। আমরা যদি পবিত্র কোরআনের শিক্ষার ওপর আমল করি তাহলে কিন্তু আমাদের সমাজে কোন ধরনের অরাজকতা থাকতে পারে না
তাই আসুন, আমরা সবাই সবাইকে ভালবাসি এবং সকল ধর্মের অনুসারীকে ভালবাসি আর একে অপরের সুখ-দু:খের সঙ্গী হই। আমরা যদি এমনটি করি তবেই না আমরা একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ ও দেশ গড়তে পারব।