চাঁদপুরের মতলব উত্তরে এক সময় নদ-নদী, বিল-ঝিল, ধানের ক্ষেত ও পুকুর পাড়ে দেখা যেত মাছরাঙার অবাধ বিচরণ। বাঁশের খুঁটিতে ওত পেতে থাকতো মাছ শিকারি এই পাখি। সুযোগ মতো স্বচ্ছ জলে ঝাঁপিয়ে পড়তো শিকারে। অনেকটা পানির ভেতর থেকে সুচালো ঠোঁটে ধরে আনতো মাছ। পরে গাছের ডালে বসে শিকারকে গিলে ফেলার সেই দৃশ্য এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। নানা কারণে দৃষ্টিনন্দন শিকারি এ পাখির সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রাণী বিশারদরা।
পাখি পরিচিতিতে দেখা যায়, মাছরাঙার ইংরেজি নাম Kingfisher। আর বৈজ্ঞানিক নাম Alcedo atthis। খাটো, বড় মাথা ও সুচালো ঠোঁটের আটোসাটো এই পাখি পুকুর, বিল ও জলাধারের পাড়ে গর্ত করে বাসা তৈরি করে বসবাস করে। আমাদের দেশে এদের রয়েছে ১২টি প্রজাতি।
ছোট নীল মাছরাঙা, সাদা বুক মাছরাঙা, ছিট/পারকা মাছরাঙা, মেঘ-হও মাছরাঙা, লাল মাছরাঙা, সবুজ মাছরাঙা, বাদামি মাছরাঙা, কালো মাছরাঙা ও বুনো মাছরাঙা ইত্যাদি। এদের বিচরণ সারা দেশে। মাছরাঙার প্রধান খাদ্য মাছ হলেও নানা ধরনের পোকা-মাকড় খায় এরা। প্রজনন মৌসুম শুরু হয় শরৎকালে। তখন ৫-৭টি ডিম দেয় মা পাখি। সময়ের বিবর্তনে পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার ও খাদ্য সংকটের ফলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সাথে হারিয়ে যাচ্ছে রূপে-গুণে অনন্য এ পাখিও।
প্রকৃতি-প্রেমী বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি মতলব উত্তর উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক কবি নুর মোহাম্মদ খান জানান, পুকুর ঘাটে আগে হরহামেশা মাছরাঙার মাছ শিকার দেখতে পেতাম। এখন কোথায় যে হারিয়ে গেলো এ পাখির মাছ শিকারের দৃশ্য? আমাদের অনিয়ন্ত্রিত নানাবিধ কর্মকান্ডের ফলে মাছরাঙা পাখির মতো প্রকৃতি থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে।
মতলব উত্তর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.তানভীর আনজুম অনিক বলেন, আগে যে পরিবেশে প্রাণীকূল নিরাপদে বসবাস করতো, তা এখন আর নেই। নানা কারণে মাছরাঙা সহ অনেক প্রাণীই আজ বিপন্ন হচ্ছে। প্রত্যেকটি প্রাণী সংরক্ষণে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে কথা হলে ‘প্রকৃতি প্রেমী, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি ছেংগারচর পৌরশাখার সভাপতি আব্দুল মালেক খান, দৈনিক শপথ,কে বলেন, প্রথমত মাছরাঙা পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে পরিবেশ দূষণ দায়ী। নানাভাবে আমাদের জলজ পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কলকারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত পানি আশেপাশের জলাশয়ে গিয়ে পড়ায় সেখানকার পানি দূষিত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে মাছসহ অন্যান্য প্রাণী।
ফলে মাছরাঙার খাবারের সংকট দেখা যাওয়া সহ দূষিত পানিতে বিষক্রিয়া হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে মাছরাঙার বাসা তৈরির সুযোগ কমে যাওয়ায় এই ধরনের পাখির সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে। তবে এদের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।