চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের মীর বাড়িতে জান্নাত আক্তার (২০) নামে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধুর আত্মাহত্যার ঘটনা উল্টো দিকে মোড় নিয়েছে।
ঘটনার ১৫ দিন পরে চাঁদপুর বিজ্ঞ আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করে নিহতের বোন রেহানা পারভীন। আদালতের নির্দেশে মতলব উত্তর থানায় মামরা রুজু করা হয়। মামলায় জান্নাত আক্তারের স্বামী সুজন মীর (৩০), মান্নান মীর (৪০), শিউলী বেগম (৪৫) ও কামরুল মীর (৫৫) কে আসামী করা হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে রোববার (৪ জুলাই) জান্নাতের পিত্রালয় দক্ষিণ গাজীপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের পরিবার।
রোববার (৪ জুলাই) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে জান্নাতের মা রহিমা বেগম ও তার বোন মামলার বাদী রেহানা পারভীন বলেন, সুজনের সাথে ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে। ওই সময়ে যৌতুক হিসেবে দুই লক্ষ টাকা ও ৩ ভরি স্বর্ণালংকার দেয়া হয়েছে। বিয়ের তিন মাস পরে জানতে পারি ছেলে বদ মেজাজি ও নারী লোভী এবং মাদকাসক্ত, গভীর রাতে বাড়িতে ফিরে। জান্নাতকে প্রায়ই মারপিট করে, সে মোবাইলে আমাদেরকে জানাতো। জান্নাতের শ্বশুড় শ্বাশুড়ি তার স্বামী সুজনকে বিদেশ পাঠানোর বাপের বাড়ি থেকে জন্য ৫ লাখ টাকা আনতো। তখন সে অপারগতা প্রকাশ করলেই মারধর করতো।
জান্নাতের যখন ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন তার স্বামী তাকে বাপের বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা আনার জন্য চাপ দিয়েছে। তখনও জান্নাত টাকা আনতে অপরাগতা জানায়, পরে তাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে। জান্নাত মৃত্যুর এক ঘন্টা আগেও আমাদেরকে ফোন করে জানাইছে মা আমাকে নিয়ে যাও না হলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। তার কিছুক্ষণ পরেই সুজন মোবাইলে জানায় হয় ৫০ হাজার টাকা দেন না হলে আপনার মেয়েকে নিয়ে যান, আর না হয় ওর লাশ পাঠাবো। এর দুই পরেই আমার মেয়ের মৃত্যু সংবাদ পাই। গিয়ে দেখি আমার মেয়ের লাশ মাটিতে পড়ে আছে। পরে পুলিশ এসে পোষ্ট মর্টেমে পাঠায়।
ঘটনার পর আমরা ১০/১৫ দিন থানায় ঘুরেছি, কিন্তু মামলা নেয়নি। পরে গত ২৮ জুন কোর্টে দিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করি। আমাদের জান্নাত যৌতুকের বলি হয়েছে। টাকা না দেওয়ায় তাকে তারা হত্যা করেছে, আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার চাই ও আসামীদের ফাঁসি চাই।
গত ১৩ জুন বিকালে জান্নাতের মৃত্যু খবর পেয়ে মতলব উত্তর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মাসুদ ও এসআই ইমাম হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে জান্নাতের লাশ মাটিতে দেখেছেন। কিন্তু তারা বলেছিল সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মাহত্যা করেছে। তাদের বক্তব্যের সাথে সুরতাহাল অনেকটাই গড়মিল।
মতলব উত্তর থানার ওসি মুহাম্মদ শাহজাহান কামাল বলেন, ঘটনার পর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পরে গত ২ জুলাই হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। এর আগে মামলা করতে আমাদের কাছে কেউ আসে নাই।
এদিকে রোববার বিকেলে রসুলপুর গ্রামে জান্নাতের শ্বশুর বাড়িতে মামলা তদন্ত করতে আসেন, সহকারি পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) ইয়াছির আরাফাত, মতলব উত্তর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মাসুদ ও মামলা তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইমাম হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা জানান, মামলা তদন্ত চলছে। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আসলে সতত্য জানা যাবে। আমরা ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছি।