চাঁদপুর মতলব দক্ষিণে প্রায় ১৫০ বছর পুরোনো অবহেলিত ও জরাজীর্ণ বরদিয়া ডিজিটাল পোস্ট অফিসটি অবশেষে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে এলাকাবাসী।
দীর্ঘদিন দরজা জানালাবিহীন ভাঙা এবং হেলে পড়া ঘরটিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ পরিচালনা করছিলেন পোস্ট মাস্টার ও পোস্টম্যান।
জানা যায়, বরদিয়া পোস্ট অফিসের কোড নম্বর-৩৬০২। ব্রিটিশ আমল থেকে এ পোস্ট অফিসটির কার্যক্রম চলে আসছে। মাত্র ২ শতাংশ জায়গায় টিনের ভাঙা একটি ঘরে চলছিল এই কার্যক্রম। তাছাড়া বরদিয়া কাজী সুলতান আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান গেটে অফিসটির অবস্থান থাকায় মারাত্মক ঝুঁকি ছিল স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য।
এমতাবস্থায় সরকারি অনুদান না পাওয়ায় স্থানীয় জনগণ নিজ উদ্যোগে ভবনটির সংস্কারের কাজ হাতে নেয়। এতে সহযোগিতা করেন মতলব দক্ষিণ পৌরসভার তিনজন কাউন্সিলরসহ এলাকার প্রায় দেড়শ মানুষ। এছাড়াও আরও অনেকে অনুদান দিতে আগ্রহী বলেও জানা গেছে।
পোস্ট অফিসটির কাগজে কলমে ডিজিটাল নাম দেয়া থাকলেও ডিজিটালের কোন ছোঁয়া নেই এখানে। পোস্টমাস্টার এবং স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে এর সংস্কার কাজের দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ কোনো নজর দেয়নি। এখানে ই-সেন্টার নামে বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু কাজে কর্মে তার কিছুই নেই বলে জানান পোস্টমাস্টার মো. অহিদুল্লাহ পাটোয়ারী।
এলাকাবাসী ও পোস্টমাস্টারের দেয়া তথ্যমতে, ভবনটি এতটাই বেহাল ছিল যে এখানে কোনোভাবেই কাজ করা আর সম্ভব হচ্ছিল না। সামান্য বৃষ্টিতেই অফিসের সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিজে যেত। এতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়েছে পোস্ট মাস্টারকে। তাছাড়া প্রাইমারি এবং উচ্চ বিদ্যালয় থাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য এই ঘরটি ছিল হুমকিস্বরূপ এবং ইতোমধ্যে দু’একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় এলাকাবাসী।
ভবনটি তৈরি করতে ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মামুন চৌধুরী বুলবুল, ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াজউদ্দিন প্রধান, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মামুন মৃধাসহ এলাকার প্রায় দেড়শতাধিক মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. বজলুর রহমান মিয়াজী জানান, প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো এই পোস্ট অফিস সংস্কারের জন্য বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও তারা কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় আমরা নিয়েছি। এছাড়া গত কয়েক বছর আগে প্রাইমারি স্কুলের এক শিক্ষার্থী খেলাধুলা সময় পোস্ট অফিসের চাল থেকে একটা টিন মাথায় পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল। তারপরই এলাকাবাসী জরাজীর্ণ এই পোস্ট অফিসটি সংস্কারের চিন্তা করে।
তিনি বলেন, সরকারি কোনো অনুদান না আসায় স্থানীয় জনগণ উদ্যোগ নিয়ে চাঁদা উঠিয়ে আপাতত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাদেরকে বসার মতো একটি স্থান করে দিচ্ছি। সরকারি অনুদান এলে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভবনটি পুনর্নির্মাণ করা যাবে। এতে কোনো সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করি না।
বরদিয়া কাজী সুলতান আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আরিফ সরকার অপু বলেন, আমি যতটুকু জানি এর আগে একবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এখানে এসে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বলে গিয়েছিলেন ভবনটি সংস্কার করার জন্য। কিন্তু সেটা আর হয়নি।
বিদ্যালয় থেকে না করায় এলাকার সবাই একত্রিত হয়ে এখন ভবনটি সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে এবং এতে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ তিনজন কাউন্সিলরও সহযোগিতা করছেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, পোস্ট অফিসের পূর্ণাঙ্গ ভবনটির অনুমোদন আসতে তিন শতক জায়গার প্রয়োজন যা এখনে নেই। এখানে ভবনটির নিজস্ব জায়গা আছে মাত্র দুই শতক। তাই হয়ত নতুন ভবনের অনুমোদন আসেনি।
পোস্টমাস্টার মো. অহিদুল্লাহ পাটোয়ারী বলেন, আমি এখানে জয়েন করেছি প্রায় দুই বছর। যতটুকু জানি এই পোস্ট অফিসের বয়স দেড়শ বছরের কাছাকাছি। নামে ডিজিটাল পোস্ট অফিস হলেও কাজেকর্মে তার কিছুই নেই এখানে। দীর্ঘদিন আমি আমার সিনিয়র কর্মকর্তাদের পোস্ট অফিস সংস্কারের কথা বললেও বিভিন্ন কারণে পোস্ট অফিসের সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। গত কয়েকদিন আগে স্থানীয় জনগণ নিজ উদ্যোগে এলাকার স্বার্থে পোস্ট অফিস সংস্কারের কাজ শুরু করে। যদিও আমি আমার সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে কাজ শুরু করার বিষয়টি এলাকাবাসীকে জানাই।
জেলা ডাক পরিদর্শক কাঞ্চন সাহা বলেন, এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে ভবনটির কাজ হাতে নিয়েছে। আমি সরকারি ভবনের জন্য একটি আবেদন পাঠিয়েছি। সেটি প্রক্রিয়াধীন। যেকোনো মুহূর্তে অনুমতি চলে আসবে। এখন এলাকাবাসী করছে, যখন ভবনের অনুমতি আর অনুমোদন আসবে তখন পুরনো ভবনটি ভেঙে নতুন ভবনের কাজ শুরু করা হবে।
এলাকাবাসীর উদ্যোগে তৈরি নতুন এই ভবনটির জন্য সরকারি ভবনের অনুমতি আসতে আরও বিলম্ব হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ পড়ে থাকায় এলাকাবাসী এবং স্কুল কমিটির পক্ষ থেকে তারা পুরোনো ঘরটি ভেঙে একটি ভবন তৈরি করছে। এতে কোনো সমস্যা হবে না।