এবারের বিজয় দিবসের ঠিক একদিন পর ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়া ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে সাতটি খাতে দেশ দুটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছে। কৃষি, বাণিজ্য, জ্বালানিসহ সাত খাতে সমঝোতা স্মারকগুলো সম্পাদিত হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়।
সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে সংশ্লিষ্ট সাত মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সচিব বা শীর্ষ কর্মকর্তা এবং ভারতের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী সই করেন।
সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে- কৃষি খাতে সহযোগিতা, হাইড্রোকার্বনে সহযোগিতার বিষয়ে রূপরেখা, হাতির সুরক্ষায় অভয়ারণ্য নিশ্চিত করা, নয়াদিল্লির জাদুঘরের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সহযোগিতা, হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প চালু, বাংলাদেশ-ভারতের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফোরামের টার্মস অব রেফারেন্স এবং বরিশালে সুয়্যারেজ প্রকল্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার পর করোনা মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘প্রতিবেশীর অগ্রাধিকার’ নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে তার সরকার এবং এই নীতির এক নম্বর স্তম্ভ হচ্ছে বাংলাদেশ।
অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে সহযোগিতামূলক ঐকমত্য রয়েছে, তার সুযোগ নিয়ে দুই দেশই নিজ নিজ অর্থনীতিকে আরও সংহত করতে পারে।
তিনি আরও বলেছেন, দুই দেশের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরতাকে আমরা আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃতি দিই। ভার্চুয়াল বৈঠকে ৫৫ বছর পর বাংলাদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ির মধ্যে রেল করিডরেরও উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় ওই রেলপথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে একটা সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল সম্মেলনের পর এই সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলা যায়। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করেছিল, বাংলাদেশ তা কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করে থাকে।
ভারতও বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে উৎসাহী এবং দেশটির এই উৎসাহ কার্যক্ষেত্রেও প্রমাণিত হয়েছে বহুবার। তবে দুই দেশের মধ্যে কিছু বিষয়ে আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও বাস্তব ক্ষেত্রে সেসব বিষয় সমস্যাক্রান্ত হয়ে রয়েছে। তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুটি সেগুলোর অন্যতম।
এই নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হয় হয় করেও হচ্ছে না। আমরা আশা করব, চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হবে এবং তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সীমান্তে হত্যাও দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বাধা বৈকি।
নরেন্দ্র মোদির সরকারের উচিত হবে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত হত্যা ইস্যুতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আমরা চাই দুই দেশের সম্পর্ক অকৃত্রিম, অকপট ও নিশ্ছিদ্র হবে, যাতে কোনো ধরনের ইস্যুই আর অমীমাংসিত থাকবে না।