প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে সুইজারল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
একই দিন নবনিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের (সিয়েরো) নির্বাহী পরিচালক (ইডি) পদে বাংলাদেশের প্রার্থিতায় ভারতের সমর্থনের কথা জানান তিনি।
পরে প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সুইস রাষ্ট্রদূতকে বলেন, আমাদের একটা যুবসমাজ আছে। যারা কাজে অত্যন্ত দক্ষ। সুইজারল্যান্ড যদি এখানে আরও বেশি বিনিয়োগ করে তবে উভয় দেশই লাভবান হবে। বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, উদার বিনিয়োগ নীতি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, অবকাঠামো সুবিধাসহ অন্যান্য সুযোগের কথা উলেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিজের সামর্থ্যে পদ্মা ব্রিজ তৈরি করছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যে যোগাযোগ সৃষ্টি হবে, সেটা সরাসরি আমাদের জিডিপিতে অবদান রাখবে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর প্রভাব দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামগুলোয় পড়তে শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যেমন, সোলার প্যানেল বসানো। অবকাঠামোসহ গ্রামে গ্রামে উন্নয়ন শুরু হয়েছে।
গ্রামীণ মানুষের উন্নয়নসহ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশকে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই ধরনের যে কোনো কাজে সুইস সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী।
প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তিতে বাংলাদেশি নাগরিকরা যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতীয় দূত আলোচনা করেছেন। হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ ভারতীয় ভিসা ইতোমধ্যে দেয়া শুরু হয়েছে, আর বাকিগুলো কোভিড-১৯ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে দেয়া হবে।
বিক্রম কুমার সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ৩ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের চলমান প্রক্রিয়াটির কথা উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি কোভিড ভ্যাকসিন কার্যকরভাবে বিতরণের জন্য বাংলাদেশি স্বাস্থ্য পেশাদারদের সক্ষমতা বাড়াতে তার সরকারের সহায়তার ইচ্ছার কথাও জানান। তিনি পারস্পরিক স্বার্থে দু’দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক পর্যায়ে আন্তঃসংযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পুনরায় আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার প্রণীত পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ এটি আবারও উল্লেখ করেন।
ভারতের হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী তাকে ধন্যবাদ জানান এবং তার মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকেও শুভেচ্ছা জানান। তিনি ভারতের নবনিযুক্ত হাইকমিশনারকে স্বাগত জানান এবং দায়িত্ব পালনকালে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।