অনেক কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্রে শহরের আকাশে ছোট আকারের যানের ভিড় দেখা যায়৷ সেই স্বপ্নকে দ্রুত বাস্তবে পরিণত করার উদ্যোগ নিচ্ছে এক কোম্পানি৷ দূষণ ও প্রায় শব্দহীন সেই যান প্যারিস অলিম্পিক্সের সময়েই নজর কাড়তে পারে৷
‘ভোলোসিটি’ যখন টেকঅফ করে বা পাশ দিয়ে উড়ে যায়, তখন প্রায় কিছুই শোনা যায় না৷ সেটির আটটি ইলেকট্রিক প্রপেলর কোনো শব্দই করে না৷ হেলিকপ্টার বা বিমানের মতো কোনো ধোঁয়াও বের হয় না৷ জার্মানির দক্ষিণে ব্রুখসাল শহরে ভোলোকপ্টারের পরীক্ষামূলক উড়াল দর্শকদের মনে বেশ রেখাপাত করেছে৷
টেস্ট পাইলট হিসেবে পল স্টোনের ইতোমধ্যেই ৫০টিরও বেশি উড়ালের অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ তাঁর মতে, প্রত্যেকটি উড়ালের সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রের উন্নতি করা হয়েছে৷ এখন সেটি বোয়িং বা এয়ারবাসের দূরপাল্লার বিমানের মতোই নির্ভরযোগ্য৷ পল বলেন, ‘‘হেলিকপ্টারের তুলনায় এটা ওড়ানো অনেক সহজ৷ এক ডিজিটাল ফ্রাইট কনট্রোল সিস্টেম থাকায় হেলিকপ্টারের মতো অনেক রহস্যজনক কমান্ড দিতে হয় না৷ ফলে চালানো সহজ হয়৷ এগোতে গেলে একটি স্টিক সামনের দিকে ঠেলতে হবে৷ পাশে যেতে হলে স্টিক সে দিকেই ঠেলতে হবে৷’
সদ্য উদ্বোধন করা হ্যাঙারের মধ্যে ভোলোকপ্টার কোম্পানির কর্ণধার ডিয়র্ক হোকে বড় আকারে ‘ভোলোসিটি’ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছেন৷ আপাতত বছরে ৫০টি ইউনিট তৈরি করা তাঁর লক্ষ্য৷
আগামী বছরের মাঝামাঝি প্যারিসে অলিম্পিক প্রতিযোগিতা শুরু হবার আগেই তিনি সেখানে নিয়মিত এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবা চালু করার উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন৷ পাইলটরা নিয়মিত মাসুলের বিনিময়ে যাত্রীদের নিয়ে উড়বেন৷ ভোলোকপ্টার কোম্পানির কর্ণধার ডিয়র্ক হোকে বলেন, ‘‘আমরা প্যারিসে শুরু করে ২০২৪ সালে রোমে যাবো৷ বছরের শেষের মধ্যে সম্ভবত সিংগাপুরেও পরিষেবা শুরু করবো৷ ২০২৫ সালের শুরুতে আমরা আন্তর্জাতিক স্তরে আরো সক্রিয় হবো৷ সৌদি আরবের নিওম এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে জাপানের ওসাকা শহরে ওয়ার্ল্ড এক্সপোর সময়ও পরিষেবা দেবো৷”
ভোলেকপ্টার গোটা বিশ্বেই নিজস্ব কনসেপ্ট তুলে ধরতে চায়৷ সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক সত্ত্বেও ‘ফিউচার সিটি’ প্রকল্প হিসেবে নিওমে সক্রিয় হতেও পিছপা হচ্ছে না এই কোম্পানি৷
ব্রুখসালে নতুন একটি কারখানা ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে৷ সেখানেই ‘ভোলোসিটি’-র অংশগুলি বড় আকারে উৎপাদন করা হবে৷ কোম্পানির মতে, বিশাল চাহিদা দেখা যাবে৷
এভিয়েশন ক্ষেত্রে বর্তমানে রূপান্তর ঘটছে বলেই কোম্পানির এমন প্রত্যাশা৷ জেনিভায় ব্যক্তিগত জেটের বাণিজ্যমেলায় লিলিয়ামের মতো প্রতিযোগীও পরিবেশবান্ধব উড়ালের নিজস্ব কনসেপ্ট তুলে ধরছে৷ বিদ্যুতচালিত উড়ন্ত যান আকাশপথে নতুন যুগের সূচনা ঘটাতে পারে৷
নির্গমন ছাড়াই উড়াল সবার সামর্থ্যের মধ্যে আনা ডিয়র্ক হোকের স্বপ্ন৷ তাঁর মতে, ‘‘শুরুর দিকে হাতে করে অনেক কাজ করতে হয়৷ ফলে বিমানের মূল্য বেশি থাকে৷ কিন্তু বড় আকারে সিরিজ প্রোডাকশন শুরু করলেই ভারসাম্য চলে আসবে৷ তখন অত্যন্ত ন্যায্য দামে আমরা বিমান উৎপাদন করতে পারবো৷ আমাদের ইতোমধ্যেই এক কারখানা রয়েছে, যা দিয়ে আমরা বছরে ৫০টি বিমান তৈরি করতে পারি৷ তখন টিকিটের দামও সবার নাগালে চলে আসবে৷
নিরাপত্তার নিরিখে ‘ভোলোসিটি’ প্রচলিত বেসামরিক বিমানের জন্য একই নিয়ম মেনে অনুমোদন পেয়েছে৷ অর্থাৎ প্রতি একশো কোটি ফ্লাইট আওয়ারে বড়জোর একটি করে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে৷ (সূত্র: ডয়েচে ভেলে)