বজ্রপাতে দেশের চার জেলায় ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম কুড়াতে গিয়ে মা-ছেলেসহ ৩ জন, জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জে ৪ জন, বাগেরহাটের শরণখোলায় এক যুবক ও সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বজ্রপাতে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার বিকালে এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে এসব জানা গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে আম কুড়াতে গিয়ে মা-ছেলেসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকালে সদর উপজেলার সুন্দরপুর ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে পৃথক দুটি ঘটনায় তারা নিহত হন। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোজাফফর হোসেন।
বজ্রপাতে নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের পাঁচরশিয়া গ্রামের রানার স্ত্রী এ্যানি বেগম (২৫) ও তার ছেলে নূর মোহাম্মদ (৫) এবং চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের টিকলীচর গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে ইয়াসির আরাফাত (১০)।
সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঝড়োহাওয়া শুরু হলে মা ও ছেলে বাড়ির পাশের আমবাগানে যায়। এ সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মা এ্যানি বেগম। গুরুতর আহত অবস্থায় ছেলে নূর মোহাম্মদকে হাসপাতালে নেয়ার পথে রাস্তায় তার মৃত্যু হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোজাফফর হোসেন জানান, সুন্দরপুরে মা ও মেয়ে মারা গেছেন। এছাড়াও আম কুড়াতে গিয়ে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ১০ বছর বয়সী ছেলে ইয়াসির আরাফাত বজ্রপাতে মারা গেছে।
বকশীগঞ্জ (জামালপুর): জামালপুরের বকশীগঞ্জে বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকালে বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের কলকীহারা গ্রামে বজ্রপাতে ৩ জন মারা গেছেন।
নিহতরা হলেন- বকশীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব কলকীহারা গ্রামের মফিজল হকের ছেলে হর বাদশা (৫০), আব্দুল খালেকের স্ত্রী আকিজা বেগম (৩০) ও ভাটি কলকিহারা গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে খলিলুর রহমান (৫৫)। একই সময় বজ্রপাতে ২টি গরুও মারা যায়।
জানা যায়, শুক্রবার বিকালে হর বাদশা নদীতে গোসল করছিলেন। খলিলুর রহমান ও আকিজা বেগম বাড়ির বাইরে ধানের কাজ করছিলেন। হঠাৎ করেই মূষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। সেই সঙ্গে বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতে ৩ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনমুন জাহান লিজা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর): শুক্রবার বিকালে দেওয়ানগঞ্জে বজ্রপাতে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার গামারিয়া গ্রামের আবেল মিয়ার ছেলে আনা মিয়া (১৫) রাজমিস্ত্রির কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে চিকাজানী দীঘিরপাড় এলাকায় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
শরণখোলা (বাগেরহাট): বাগেরহাটের শরণখোলায় বজ্রপাতে মো. আবু বকর খান (২৬) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক ওই গ্রামের বাবুল খানের ছেলে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রুহুল আমিন জানান, বিকালে তুমুল বৃষ্টির সময় আবু বকর গরু খুঁজতে মাঠে গেলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বজ্রপাতে নদীতে পড়ে ইলিয়াছ আলী (২৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের সোনাপুর ও পূর্ব চাইরগাঁও এলাকায় ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি চেলা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
ইলিয়াছ আলী সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র। এ সময় তার সহযোগীরা অল্পের জন্য বেঁচে যান। তাদের বাড়িও নিহতের একই এলাকায়।
প্রত্যক্ষ্যদর্শী নিহতের নিকটাত্মীয় দুই সহযোগী ও স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনের মতো শুক্রবার ভোরেও একটি স্টিলবডি নৌকাসহ বালু কালেকশন করতে চেলা নদীতে যান দুই সহযোগীসহ ইলিয়াছ আলী। সকাল অনুমান ৮টার দিকে নৌকার দাঁড়ে (কাড়ালে) থাকা ইলিয়াছ আলী বজ্রাঘাতে নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে নদীতে তলিয়ে যান। বজ্রপাতে পুড়ে যাওয়া তার পরনের রেইনকোর্টটি পানিতে ভেসে উঠলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ডুবুরিসহ স্থানীয়রা দিনভর অভিযান চালিয়েও লাশের কোনো খোঁজ পায়নি।