মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান করে নির্বাচিত সরকার উৎখাতের চার মাস পার হলো। ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। তার আগে গ্রেপ্তার করা হয় দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিসহ নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের। এর প্রতিবাদে ও গণতন্ত্রের দাবিতে শুরু থেকেই বিক্ষোভ করে আসছে দেশটির জনতা।
বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এখন পর্যন্ত ৮৩৩ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর নির্বিচার হামলা ও নিপীড়ন চলছেই। ফলে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে সশস্ত্র প্রতিরোধে।
যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানায়, এমন পরিস্থিতিতে গৃহযুদ্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে মিয়ানমারে। টানা সামরিক সহিংসতার মুখে নিজেদের রক্ষা করতে বিভিন্ন গোষ্ঠী অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে।
জান্তা সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে গড়ে ওঠা ছায়া সরকার (ঐক্য সরকার) ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) মুখপাত্র সাসা তেমনই সতর্কতা দিলেন। সাসা বলেন, মিয়ানমারের মানুষের এখন আর কোনো উপায় নেই।
নির্বিচার জান্তা বাহিনীর অভিযান, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হত্যা মানুষকে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এটি মাত্র শুরু। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। কোনো গ্রামে যদি একটি পুরুষ মানুষও থাকে, তবু খুনিদের সামনে তারা মাথা নত করবে না। তার মানে পুরো দেশ এখন গৃহযুদ্ধের দিকেই হাঁটছে। ঐক্য সরকারও জান্তার বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছে নিজস্ব সেনাবাহিনী।
মিয়ানমার সীমান্ত এলাকাগুলোতে অনেকগুলো নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের জন্য দশকের পর দশক ধরে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়ে আসছে। সেনা অভ্যুত্থানের পর তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের বেশ কটি গোষ্ঠী জান্তাবিরোধী সশস্ত্র প্রতিরোধে যোগ দিয়েছে। ফলে দেশটির যেসব এলাকা আগে শান্তিপূর্ণ ছিল, সেখানে এখন লড়াই চলছে।
পশ্চিম কায়াহ রাজ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চলছে পুরোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেনি আর্মি ও নতুন গঠিত কারেনি পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (কেপিডিএফ) মধ্যে। গত কয়েক সপ্তাহে এ লড়াইয়ে হাজার হাজার মানুষ ওই অঞ্চল ছেড়ে পালিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউকে কেপিডিএফ জানায়, গত সোমবার সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে বেসামরিক যোদ্ধাদের ওপর বোমা ফেলে ও গুলি চালায়। বাহিনীটির এক সদস্য বলেন, ‘আমরা হালকা অস্ত্র দিয়ে তাদের হামলা চালিয়েছি, আর তারা মারণাস্ত্র দিয়ে আমাদের জবাব দিয়েছে।’