শিরোনাম
প্রধান কোচ হওয়ার যোগ্য কেউ বাংলাদেশে নেই: তামিম বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই বাংলাদেশের একটিও খালাস পেলেন ফখরুল-খসরু-রিজভী চিনির আমদানি শুল্ক কমানো হলো ৫০ শতাংশ তিন অতিরিক্ত আইজিপি বাধ্যতামূলক অবসরে ডিএনসিসির সব ওয়ার্ডে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু মুন্সীগঞ্জে ২০ ঘণ্টায় ৩ মরদেহ উদ্ধার শপথ নিলেন ২৩ বিচারপতি ফ্লোরিডায় আঘাত হানতে পারে ‘মিল্টন’ এস আলমের দুই প্রতিষ্ঠানের বিআইএন লক এখনো উদ্ধার হয়নি পুলিশের ১৪৫৯ অস্ত্র টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা মাহমুদউল্লাহর বায়ু, পানি ও শব্দদূষণ রোধে একসাথে কাজ করতে হবে : রিজওয়ানা হাসান এবি পার্টির আহ্বায়ক সোলায়মান চৌধুরী পদত্যাগ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষিণ সুদানের পথে নৌবাহিনীর ৬৭ সদস্য
বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন

এবার ২০ হাজার পরিযায়ী পাখি কম এসেছে

দর্পণ প্রতিবেদন / ২৪১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ৮ মে, ২০২১

দেশে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ২০ হাজার পরিযায়ী পাখি কম এসেছে। বাংলাদেশের প্রধান জলাভূমিগুলোতে এ বছর সব মিলিয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছে। গত বছর প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার পাখি এসেছিল।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, বন বিভাগ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের যৌথ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণ বলছে, বিশ্বের ৭টি দেশ থেকে এসব পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসে। ওই সব দেশের মাটি-পানি বরফ আচ্ছাদিত হয়ে পড়ায় তারা খাবারের আশায় এ দেশে আসে। গত এক যুগের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বছরের সাত মাস পরিযায়ী পাখিরা বাংলাদেশে থাকছে। শুধু ডিম পাড়া ও বাচ্চা বড় করতে তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যায়।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি পাখিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। এই দুই দিনে টাঙ্গুয়ার হাওরে মোট ৩৯ প্রজাতির পাখি দেখা গেছে, যার মধ্যে ২৭টি পরিযায়ী প্রজাতির। সবচেয়ে বেশি ১২ হাজার ৭৬০টি পিয়ং হাঁস দেখা গেছে। এরপর লালমাথা ভূতিহাঁস দেখা গেছে ৯ হাজার ৯০৩টি। এ ছাড়া কুট পাখি দেখা গেছে ৯ হাজার ৩৯৮টি। এবারের শুমারিতে পৃথিবীজুড়ে মহাবিপন্ন প্রজাতির পাখি বেয়ারের ভূতিহাঁস দেখা গেছে। বিরল প্রজাতির বৈকাল তিলিহাঁস, ফুলুরি হাঁস, কুঁড়া ইগল, খয়রা কাস্তেচরা, উত্তুরে টিটি ও কালোলেজ জোড়ালি পাখিও দেখা গেছে।

জাতীয় পাখিশুমারির তথ্যমতে, ২০১৯ সালে শুধু টাঙ্গুয়ার হাওরে ১ লাখ ৪৬ হাজার পরিযায়ী পাখি দেখা গিয়েছিল। সে বছর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমিগুলোতে প্রায় আড়াই লাখ পরিযায়ী পাখি এসেছিল। এত বিপুল পাখি দেখা যাওয়ায় দেশের প্রকৃতিপ্রেমীরা বেশ আনন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু এর পরের বছর থেকেই বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখি আসা কমতে শুরু করে।

২০২১ সালে পরিযায়ী পাখি
টাঙ্গুয়ার হাওর ৬১,১২৫টি
হাকালুকি ২৫,০০০টি
উপকূল ৩০,০০০টি
পদ্মার চর ৪,০০০টি
অন্যান্য জলাভূমি ৫০০০টি
মোট ১ লাখ ২৫ হাজার ১১৫টি

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও আইইউসিএনের পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে এসব পাখির বসতি এলাকাও ৩৫ শতাংশ কমেছে। মূলত টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর, বাইক্কার বিল, উপকূলীয় এলাকা, নদীর চর ও দেশের অভ্যন্তরীণ বিল এবং জলাশয়গুলোতে বসতি গড়ে পরিযায়ী পাখি। দেশে যে ৭১১ প্রজাতির পাখি দেখা যায়, তার মধ্যে ৩৮৮ প্রজাতি হচ্ছে পরিযায়ী। এরা মূলত মঙ্গোলিয়া, তিব্বত, চীন, ভারত, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান ও রাশিয়া থেকে আসে। এদের মধ্যে ২০০ প্রজাতির পাখি আসে শুধু শীতকালে। তবে গ্রীষ্মকালেও ১১ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে আসে। অন্যান্য পরিযায়ী পাখি বছরের অন্যান্য ঋতুতে এসে থাকে।

২০২০ সালে পরিযায়ী পাখি
টাঙ্গুয়ার হাওর ৫১,৩৬৮টি
হাকালুকি ৪০,১২৬টি
উপকূল ৩৫,০০০টি
পদ্মার চর ৪০২৫ টি
অন্যান্য ১৫,০০০টি
১ লাখ ৪৫ হাজার ৫১৯টি
২০১৯ সালে ২,৪৬,৬৬৫ টি
২০১৮ সালে ১,৪৭,১৩০টি

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইনাম আল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই পাখির আবাসস্থল কমে আসছে। অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এশিয়ায় বেশি কমছে। বাংলাদেশে জলাভূমিগুলো ভরাট ও দূষিত হয়ে পাখির বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। আমাদের বড় হাওর ও বিল এবং সুন্দরবনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সুরক্ষা দিতে হবে। তাহলে দেশে পরিযায়ী পাখি আসা আবারও বাড়বে।’

তবে এর মধ্যে কিছুটা খুশির খবর হচ্ছে, গত বছরের তুলনায় এবার টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখির পরিমাণ বেড়েছে। গত বছর টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখি দেখা গিয়েছিল ৫১ হাজার ৩৬৮টি, আর এবার এই হাওরে পাখি এসেছে ৬১ হাজার ১২৫টি। অন্য হাওরগুলোর তুলনায় এখানকার পরিবেশ এখনো পাখির বসতি গড়ার জন্য উপযোগী রয়েছে। যে কারণে এখানে এসে পাখিরা বসতি গড়ছে। অন্য হাওরগুলো থেকেও এখানে পাখিরা চলে আসছে। এবারের জরিপে দেখা গেছে, দেশের সিলেট বিভাগে বড় হাওর ও বিল ছাড়াও ছোট এবং মাঝারি আকৃতির প্রায় ২০০ জলাশয় রয়েছে। পরিযায়ী পাখিরা সেখানেও বসবাস করছে।

হাজার হাজার মাইল দূর থেকে আসা এসব পাখি বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়ে বসতি গড়ে তোলে

ছবি: আইইউসিএন এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সৌজন্যে

এ ব্যাপারে সরকারের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবনসহ দেশের উপকূলীয় চরগুলোতেও প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসছে। সেখানে তারা যথেষ্ট সুরক্ষা পাচ্ছে। তবে দেশের হাওরসহ অভ্যন্তরীণ জলাশয় এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করার মাধ্যমে এসব পরিযায়ী পাখির আরও বেশি সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব ।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের গবেষণায় বলা হয়, দেশের হাওর এলাকায় সার প্রয়োগ কম হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সেখানে আসা পরিযায়ী পাখিদের বিষ্ঠা প্রাকৃতিক সার হিসেবে ভূমিকা রাখে। ফলে হাওরে ধান ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও এসব পাখি ভূমিকা রাখছে। দেশের উপকূলীয় এলাকার ৪৫টি চরে নিয়মিতভাবে পরিযায়ী পাখিরা আসে। সুন্দরবন এলাকায় গত এক যুগে অনেক নতুন চর তৈরি হয়েছে। সেখানেও এসব পাখি বাসা বাঁধছে। অনেক পাখি আবার স্থায়ীভাবে থেকে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রজাতি ও জীববৈচিত্র্য বিভাগের সমন্বয়ক এ বি এম সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরে মিষ্টি পানির সরবরাহ ও পাখির উপযোগী খাবার এখনো ভালো পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। তবে অন্য হাওরগুলো মাছ ধরার জন্য ইজারা দেওয়ার কারণে সেখানে পাখি যাতে বসতে না পারে, সে জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। কিন্তু কোনো হাওর বা জলাশয়ে পাখি বেশি এলে সেখানে মাছ ও ফসলের মৌসুমে ধানের উৎপাদন বাড়ে। আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় প্রকৃতিনির্ভর সমাধানের যে পথের কথা বলছি, দেশের পরিযায়ী পাখিদের বসতি এলাকাগুলোকে সংরক্ষণ করে আমরা সেই দিকে উদাহরণ তৈরি করতে পারি।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ