আজ ভয়াল ১৯ ফেব্রুয়ারি। মতলবের এম ভি মহারাজ লঞ্চ দুর্ঘটনার ১৬ বছর। ২০০৫ সালের আজকের এ দিনে কালবৈশাখী ঝড়ে ঢাকা সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা মতলবগামী এম ভি মহারাজ লঞ্চটি প্রায় আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাগলা নামক স্থানে লঞ্চটি উল্টে নিমজ্জিত হয়।
এতে লঞ্চে থাকা প্রায় দু’শতাধিক বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষ প্রাণ হারায়। লঞ্চটিতে মতলব দক্ষিণ ও উত্তর উপজেলার যাত্রী ছাড়াও চাঁদপুর,শরীয়তপুর,ভোলা সহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার যাত্রী ছিল।
লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনদের কান্না থেমে নেই আজও। মতলববাসীর জন্যে আজকের দিনটি হচ্ছে শোকাহত এক স্মরণীয় দিন। লঞ্চ দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের মধ্যে ছিলÑনারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, তার কন্যা মতলব কঁচি-কাঁচা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী শিলাত জাহান অর্থি,শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল হাই মাস্টার, আইসিডিডিআরবির ডা. মো. মাসুম, দগরপুরের প্রকৌশলী ফারুক দেয়ান, মতলব বাজারের সার ব্যবসায়ী ইয়াসিন মৃধা, ডেফোডিল ইউনির্ভাসিটির কর্মকর্তা ফরুক দেয়ানসহ পরিবারবর্গ, দশপাড়া গ্রামের মফিজুল ইসলাম, বাইশপুর গ্রামের ছোট খোকন ও বড় খোকন, মতলব উত্তরের বারহাতিয়া গ্রামের ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী শাহআলম সহ নাম জানা নাজানা অনেকের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত লাশগুলো তখন মতলব দক্ষিণ থানার সামনে সারিবদ্ধ ভাবে তাবু টানিয়ে রাখা হয়েছিল। লাশের স্বজনদের আহাজাড়িতে পুরো মতলবে শোকের মাতম নেমে আসে। অধিকাংশ লাশের মুখমন্ডল ও শরীর গলে যাওয়ায় তাদের চিনতে আত্মীয় স্বজনদের হিমশিম খেতে হয়েছিল। লাশের পরণে থাকা পোশাক এবং জন্মগত চিহ্ন দেখে অনেক লাশ সনাক্ত করেছে স্বজনরা।
আর যে সকল লাশের কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি তাদের ছবি তুলে তাদের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে ঢাকিরগাঁও রিয়াজুল জান্নাত কবরস্থানে দাফন করা হয়। ঐ বেওয়ারিশ লাশের কবরের পাশে এসে লাশ খুঁজে না পাওয়া স্বজনরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে কবর জিয়ারত ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না।
এ দিকে লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহতের স্মরণে আজ বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানায় মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে স্বজনরা।
এছাড়া মতলব সূর্যমুখী কঁচি-কাঁচা মেলার উদ্যোগে বিদ্যালয়ের ছাত্রী শিলাত জাহান অর্থিসহ সকল নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনায় মিলাদ মাহফিল ও শোক সভার আয়োজন করা হয়েছে।