অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনা (কোভিড-১৯) এর তিন কোটি ডোজ টিকা আমাদের সরকার কিনতে যাচ্ছে, যা মানুষকে বিনামূল্যে দেয়া হবে। এটি একটি বড় সুখবর। সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ও দাবি ছিল এটি।
আমাদের দেশে প্রথম ধাপে কতসংখ্যক মানুষের জন্য টিকা প্রয়োজন, কোন কোন উৎস থেকে তা আসবে- এসব চূড়ান্ত করার পাশাপাশি টিকা হাতে পাওয়ার পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই। টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণ কাজে লোকবল, সরঞ্জামসহ সামগ্রিক পরিকল্পনা এখনই ঠিক করে রাখা না হলে পরবর্তী সময়ে পুরো বিষয়টির ব্যবস্থাপনায় নানা ধরনের ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
টিকাপ্রাপ্তির পর তা প্রয়োগে কারা অগ্রাধিকার পাবে, তা নির্ধারণ করে রাখার বিষয়টি অনেকদিন ধরেই দেশে আলোচিত হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এসব প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি থাকলে তাও দ্রুত পূরণ করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক আবিষ্কৃত করোনার টিকা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন না পেলেও এসব টিকার যেসব বৈশিষ্ট্য জানা যাচ্ছে তাতে স্পষ্ট যে, এর পরিবহন ও সংরক্ষণে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন কারণে ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা উন্নয়নশীল দেশের মানুষের কাছে সুলভ হচ্ছে না। করোনার টিকা পাওয়ার জন্য তাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা কারা পাবেন এ নিয়ে দেশের মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, এ টিকা কারা আগে পাবে, তা ঠিক হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী। ইতোমধ্যে এ টিকার জন্য বাংলাদেশ সরকার, সেরাম ইন্সটিটিউট ইন্ডিয়া ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে চুক্তিও হয়েছে। এই টিকা দুই থেকে আট ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য।
প্রথম ডোজ নেয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ করতে হবে। জানা গেছে, টিকার পর্যায়ভিত্তিক প্রাপ্যতা বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী, তথা মহামারী মোকাবেলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির কর্মী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী, শিক্ষাকর্মী ও গণপরিবহনকর্মীরা টিকাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। টিকাদান কার্যক্রম শুরুর আগে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রণয়নের পাশাপাশি টিকা প্রদানে বিভিন্ন পর্যায়ের মনিটরিং কমিটি গঠনের কাজটি সহজ নয়।
যেহেতু কর্তৃপক্ষ ব্যতিক্রমী একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে যাচ্ছে, সেহেতু এ কাজে ব্যাপক প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনসহ এ বিষয়ক অন্যান্য কার্যক্রমে যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতির ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। টিকা প্রদানের মধ্য দিয়ে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।