করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মানসম্পন্ন ভ্যাকসিনের সর্বজনীন ও ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি, স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং মহামারি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন তিনি।
শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৩১তম বিশেষ অধিবেশনে রেকর্ডকৃত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে জরুরি মনোযোগ এবং আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রথমত, আমাদের যথাসময়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ও সাশ্রয়ী মূল্যে সবার জন্য মানসম্মত ভ্যাকসিনপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
শুক্রবার এ বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) বর্তমান চেয়ার আজারবাইজান এবং জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল এ অধিবেশন আহ্বান করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির কথা আসে, তখন কাউকে পিছনে রাখা সমীচীন হবে না। এটি মহামারি পরাস্ত করতে, জীবন বাঁচাতে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে আমাদের সহায়তা করবে।’
করোনার ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক জনপণ্য হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর ট্রিপস চুক্তির আওতায় আইপি রাইটস ওয়েভার ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের সক্ষমতা আছে এবং সুযোগ পেলে ভ্যাকসিন তৈরি করতে প্রস্তুত আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক সহায়তাসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। সরকারগুলোর পাশাপাশি জাতিসংঘ, আইএফআই, সুশীল সমাজকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একে অপরের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্ব এখনও এই মারাত্মক ভাইরাস এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় কঠিন সময় পার করছে। এ প্রেক্ষাপটে এ অধিবেশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব বহন করে। কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রণে না আনলে করোনাকে কখনো কোনো একটি স্থানে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। আসুন, আমরা একটি টেকসই বিশ্বের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা সম্পাদনে নতুনভাবে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করি, যেখানে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভবিষ্যত মহামারি মোকাবিলায় সক্ষম হবে।’
বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি লোক মারা গেছে এবং প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ মহামারি অনেক মানুষকে আরও দরিদ্র করছে এবং অনেকে ক্রমে দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সব দেশে অপুষ্টি, বৈষম্য ও ক্রমবর্ধমান অসমতা চেপে বসছে। শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে ব্যবসা, বাণিজ্য ও পর্যটনে প্রবল ধ্বস নামায় মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই এখনও শেষ হয়নি। অনেক দেশই দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাক্কার মুখোমুখি হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করেছি। আমাদের অর্থনীতি ও জনগণকে মহামারি থেকে রক্ষায় সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছি। আমার সরকার ব্যবসা, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতার ওপর প্রভাব হ্রাস করতে ১৪.১৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা আমাদের জিডিপির ৪.৩ শতাংশের সমান। মার্চ মাসের প্রথমদিকে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সরকার ২৫ মিলিয়নেরও বেশি লোককে সহায়তা দিতে সামাজিক সুরক্ষাবেষ্টনীর আওতা সম্প্রসারিত করেছে।’
তিনি জানান, করোনা মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কা সামাল দিতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ।