পৃথিবীর ইতিহাসে অনুপম দুটি নাম- একটি হল ইয়াহইয়া আর অপরটি মুহাম্মাদ।
ইয়াহইয়া সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, হে জাকারিয়্যা! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি তার নাম হবে ইয়াহইয়া, এ নামে আগে আমি কারও নামকরণ করিনি। সূরা : মারইয়াম, আয়াত : ৭।
মুহাম্মাদ নাম সম্পর্কে বর্ণিত আছে- রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মের সপ্তম দিবসে তাঁর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব তার নাতির নাম মুহাম্মাদ ঘোষণা করলেন। উপস্থিত লোকজন নাম শুনে অবাক হয়ে একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। কারণ ইতঃপূর্বে তারা এ নাম আর শোনেনি।
এ নামটি আল্লাহতায়ালা শুধু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন।
আল-কোরআনে বিভিন্ন প্রসঙ্গে এ নামটি মোট চারবার এসেছে- মুহাম্মাদ একজন রাসূল মাত্র; তার আগে বহু রাসূল গত হয়েছে। সুতরাং যদি সে মারা যায় অথবা সে নিহত হয় তাহলে তোমরা কি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে?
কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনও আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না বরং আল্লাহ শিগগিরই কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করবেন। -আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৪। মুহাম্মাদ তোমাদের মাঝে কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। -সূরা : আহযাব, আয়াত : ৪০।
যারা ইমান আনে, সৎকর্ম করে এবং মুহাম্মাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে, আর তাই তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্য। -সূরা : মুহাম্মাদ, আয়াত : ২। মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; তাঁর সহচররা কাফিরদের ব্যাপারে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। -সূরা : ফাতহ, আয়াত : ২৮।
আল্লাহর ওপর ইমান আনাও মুহাম্মাদ (সা.)কে আল্লাহর নবী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার বাক্যকে কালিমায়ে শাহাদাত বলে। যেমন- আমি সাক্ষী দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আমি আরও সাক্ষী দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
আজান ও ইকামতে মুহাম্মাদ নাম- পাঁচ ওয়াক্তের আজানে যেই মর্মস্পর্শী বাক্যগুলো মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় তাতেও মুহাম্মাদ সুমধুর নাম ধ্বনিত হয়।
‘আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’- আমি ঘোষণা দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, ‘আশহাদু আন্না মুুুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ আমি ঘোষণা দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।
দরুদে ইবরাহিমের অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের ওপর রহমত নাজিল কর এবং মুহাম্মাদের পরিবার তথা অনুসারীদের ওপরও যেভাবে তুমি ইবরাহিম ও তার পরিবার তথা অনুসারীদের ওপর রহমত নাজিল করেছিলে। তুমি অবশ্যই প্রশংসনীয় ও সম্মানিত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমাকে নিয়ে জিবরাইল রওনা করলেন, তিনি পৃথিবীর নিকটতম আকাশে পৌঁছে দরজায় আঘাত করলেন। প্রশ্ন হল কে আপনি? তিনি বললেন, আমি জিবরাইল। আবার প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে?
তিনি উত্তর দিলেন, মুহাম্মাদ। এভাবে দ্বিতীয় আকাশে ইয়াহইয়া ও ঈসা (আ.), তৃতীয় আকাশে ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আকাশে ইদরিস (আ.), পঞ্চম আকাশে হারুন (আ.), ষষ্ঠ আকাশে মূসা (আ.) ও সপ্তম আকাশে মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.) অবস্থান করছিলেন।
মহাকাশের প্রতিটি স্তরেই জিবরাইল (আ.) অপেক্ষমাণ নবী-রাসূলগণকে মহানবীর পরিচয় দিতে তাঁর মূল নাম মুহাম্মাদ উল্লেখ করেছেন (বুখারি ও মুসলিম)।
কিয়ামতের মহাবিপদে আল্লাহ মুহাম্মাদ বলেই ডাকবেন, কিয়ামতের মহাবিভীষিকায় যখন মানবকুল পাগলপারা হয়ে ঘুরবে। আল্লাহর দরবারে বিচার কায়েম করার জন্য সবাই আকুতি জানাবে। নবী-রাসূলগণের কাছে বিচার কায়েম করার সুপারিশের জন্য লোকজন যাবে।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন আরশের নিচে গিয়ে সিজদায় লুটিয়ে পড়বেন। আল্লাহতায়ালা তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় নাম মুহাম্মাদ বলে ডাকবেন। হাদিসের ভাষায়… হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। বল, শোনা হবে, আবেদন কর, দেয়া হবে। সুপারিশ কর, গৃহীত হবে (বুখারি ও মুসলিম)।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়-
‘মোহাম্মদ নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে/ তাই কিরে তোর কণ্ঠের গান এমন মধুর লাগে/ ওরে গোলাপ নিরিবিলি/ বুঝি নবীর কদম ছুঁয়েছিলে/ তাই তাঁর কদমের খোশবু আজও তোর আতরে জাগে।
লেখক : সিনিয়র মুহাদ্দিস ও লেখক-গবেষক ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ